বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চলছে শুধু একটি ইউনিট, কয়লার স্তূপ বিপদজনক মাত্রায়

আপলোড সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ০৪:৩৫:২২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ০৪:৩৫:২২ অপরাহ্ন
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেমে এসেছে স্থবিরতা। কেন্দ্রটির ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ইউনিট থাকলেও বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র একটি, যা থেকে গড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অপর দুইটি ইউনিট দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও দিনাজপুরসহ আশপাশের ৮টি জেলায় লোডশেডিং বেড়ে গেছে চরমভাবে।

অব্যবহৃত কয়লার কারণে এখন আর সংকট নয়, বরং অতিরিক্ত মজুদের কারণে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বড়পুকুরিয়া কোল ইয়ার্ডে। কয়লার স্তূপ ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিরাপদ সীমা, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

২০০৬ সালে উৎপাদন শুরু করা এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে উত্তোলিত কয়লার ওপর নির্ভরশীল। প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়াট করে এবং তৃতীয় ইউনিটের ২৭৫ মেগাওয়াট। তবে যাত্রার শুরু থেকেই যান্ত্রিক ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতিতে কখনোই তিনটি ইউনিট একসাথে চালু রাখা সম্ভব হয়নি।

দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে সম্পূর্ণরূপে অচল। দীর্ঘ সময় সচল না থাকায় এর যন্ত্রপাতিও অকেজো হয়ে পড়ছে। এদিকে চলতি বছরের ৩০ জুলাই বয়লার পাইপ ফেটে বন্ধ হয়ে যায় প্রথম ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম, যা আগে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতো।

ফলে বর্তমানে শুধু তৃতীয় ইউনিটটি চালু রয়েছে এবং সেখান থেকেই জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এই ইউনিট সচল রাখতে প্রতিদিন প্রয়োজন হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন কয়লা।

তবে কয়লা সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। বরং উৎপাদিত কয়লার ব্যবহার কমে যাওয়ায় কয়লার মজুদ বেড়ে গিয়ে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন হলেও বর্তমানে সেখানে মজুদ রয়েছে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন কয়লা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক প্রকৌশলী জানান, তিন শিফটে চালু রাখার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে প্রায়ই এক বা একাধিক ইউনিট বন্ধ থাকছে। কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনো রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিতভাবেই।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং) খান মো. জাফর সাদিক বলেন, প্রতিবছর খনি থেকে গড়ে ৮-১০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হলেও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয় সর্বোচ্চ ৭ লাখ টন। এ কারণেই প্রতিবছর মজুদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

বর্তমানে কয়লার স্তূপের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ মিটারে পৌঁছেছে, যা নিরাপদ মাত্রা (৫ মিটার) অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।

অন্যদিকে, গত ২৩ জুন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ১৩০৫ নম্বর ফেইজের কয়লা উত্তোলন শেষ হওয়ায় খনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে নতুন ১৪০৬ নম্বর ফেইজে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুনরায় উত্তোলন শুরু হতে পারে। তবে নতুন ফেইজ চালু হলে কয়লা মজুদের সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বর্তমানে একমাত্র তৃতীয় ইউনিট থেকেই গড়ে ১৬০-১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, যা সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হচ্ছে। বাকি দুটি ইউনিটের বিষয়ে মেরামত পরিকল্পনা চলমান।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]