রাজশাহী নগরীতে সড়কে ঝলমলে আলো পাড়া-মহল্লা অন্ধকার! ঘটছে অপরাধমূলক কর্মকান্ড

আপলোড সময় : ২৯-০৭-২০২৫ ০৭:৪৩:৪৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৯-০৭-২০২৫ ০৮:১৪:৫৯ অপরাহ্ন
গত জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণঅভ্যুথানের পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। পাড়া মহল্লায় ড্রেনে পচাঁ দুর্গন্ধ যুক্ত ময়লা, জঙ্গল, ঝোপঝাড় সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাড়ছে মশার উপদ্রব। কোথায় যেন এক মিনিট দাঁনোর উপায় নাই। ঘিরে ধরছে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। ফলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।

অপর দিকে ‘আলোর শহর’ খ্যাত রাজশাহী মহানগরীর পাড়া-মহল্লায় বৈদ্যুতিক পোলের কোনটাতে বাল্ব আছে, আবার কোন পোলে বাল্ব নাই। সমস্যা হলো বাল্ব থাকলেও লাভ নাই। কারন দীর্ঘ প্রায় ৬/৭মাস যাবত পোলের কোন বাল্ব জ্বলে না। ফলে সন্ধার পরে রাজশাহী নগরীর সড়ক মহাসড়কে দৃষ্টিনন্দন বাতির আলোতে শহর আলোকিত থাকলেও, উল্টা চিত্র পাড়া মহল্লা অন্ধাকারে ডুবে থাকছে। এতে চুরি, ছিনতাই ও ছোট খাটো সড়ক দূর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

নগরীর মতিহার থানার ধরমপুর এলাকার বাসিন্দা বিএনপি নেতা মোঃ আনসার আলী বলেন, সন্ধার পর বৈদ্যুতিক পোলে বাল্ব না জ্বলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনযাপন করছে এলাকাবাসী। সেই সাথে রাসিকের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম না থাকায় ড্রেনগুলিতে ময়লার স্তুপের সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গল ঝোঁপঝাড়ের কারণে মশার উপদ্রব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। 

রাসিক (২৮ নং ওয়ার্ড) সাবেক কাউন্সিলর মোঃ আশরাফুল হাসান বাচ্চু বলেন, রাজশাহী নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর শূণ্য। ওয়ার্ড গুলি বর্তমানে সরকারী কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। একজন কাউন্সিলর যেভাবে নাগরীক সেবা নিশ্চিত করবে, সরকারী কর্মকর্তারা সেভাবে নাগরীক সেবা প্রদান করতে পারবেন না। কারণ স্থানীয়রা এলাকার কোন স্থানে সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানাতো, সেই সমস্যা অনুযায়ী জণভোগান্তি নিরসনে কাউন্সিলররা পাড়া, মহল্লায়, মাঠে, ঘাটে গিয়ে কর্মচারীদের দিয়ে সমস্যার সমাধান দিত।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রয়েটে), চাকরির জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন রুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সামান্য নাগরিক সনদপত্র নিতে চাকরি প্রত্যাশীদের ওয়ার্ড কার্যালয়ে বার বার ঘুরতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাকে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না, বিধায় ভোগান্তি বাড়ছে।   

নগরীর শাহমখদুম থানার বড়-বনগ্রামের বাসিন্দা (রাসিক ১৮ নং ওয়ার্ড), মোঃ আবির শেখ বলেন, রুয়েটে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিন আগস্ট বিকাল ৫টা পর্যন্ত আবেদনের শেষ সময়। আমি নাগরীক সনদপত্র নিতে আজ প্রায় ১০দিন ধরে ঘুরছি। আমাদের স্যার ঢাকায় আছেন। তার সহি করা কোন নাগরীক সনদপত্র নেই। তাই আমি সনদপত্র দিতে পারছিনা। ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরডিএর একজন ইঞ্জিনিয়র। তার মুঠো ফোনে ফোন দিলে তিনি জানান, সরকারী কাজে ঢাকায় আছি। তাই সনদপত্র দিতে অপারগতা জানাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত চাকরির আবেদন থেকে বঞ্চিত হলেন আবির। 

নগরীর কাজলা এলাকার অতিকুর রহমান মন্টু জানায়, বৈদ্যুতিক পোলে বাল্ব জ্বলে না। পুরো এলাকার রাস্তা অন্ধকারে ডুবে থাকে। ফলে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েই চলেছে। এছাড়াও পাড়া-মহল্লায় পুলিশের টহল নাই। মানুষজন একপ্রকার নিরাপত্তাহীনতায় মধ্যেই রয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই), সকালে মহানগরীর একাধীক ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক পোলে বাল্ব বা লাইট নেই। যে বাল্ব গুলো আছে তা সবই নষ্ট, জ্বলে না বলে এলাকাবাসীরা জানায়।

এর আগে সোমবার রাতে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক কোন পোলেই বাল্ব জ্বলছে না। ফলে রাতের অন্ধকারে নগরীর মতিহার থানার কাজলা, অক্ট্রয়মোড়, বাজেকাজলা, ধরমপুর, মৃধাপাড়া, জাহাটঘাট এলাকার অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। তেমন একটা লোকজনের যাতায়াত নেই। প্রকাশ্যে চলছে মাদক সেবন ও মাদকের কারবার। 

নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিশাল জানান, দীর্ঘ ছয় মাস ধরে আমাদের রাস্তার পোলের বৈদ্যুতিক বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পুরো ওয়ার্ড অন্ধকারে ডুবে আছে। এই অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে মাদক কারবারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মাদক সেবিরা এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে। এমন পরিবেশে আমাদের মা-বোনদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। রাতে চলাফেরা করতে সবাই ভয় পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত শনিবার আমাদের এলাকার নির্মাণাধীন ভবন থেকে পানির সাবমার্সিবল মেশিন চুরি হয়েছে।

টিকাপাড়ার বাসিন্দা আরিফুজ্জামান বলেন, বৈদ্যুতিক পোলগুলোতে বাল্ব না থাকায় আমাদের এলাকায় থমথমে পরিবেশ। গত রবিবার পাশের বাড়ির তিনতলা থেকে এসির কনডেন্সার ইউনিট চুরি হয়েছে। প্রতিদিনই চুরির ঘটনা শোনা যাচ্ছে। পুলিশের টহল নেই বললেই চলে। নগরীর বোয়ালিয়া থানার পাঁচানিমাঠের বাসিন্দা রুবেল জানান, তিন দিন আগে মধ্যরাতে আমাদের এলাকায় বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়েছে। আমি বেশ কয়েকদিন ধরে ওয়ার্ড সচিবকে লাইট লাগানোর বিষয়ে বলেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রাসিকের বৈদ্যুতিক পোলের বাল্ব সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ শাখার প্রধান কর্মকর্তা এবিএম আসাদুজ্জামান সুইট জানান, বর্তমানে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত লাইটের মজুদ নেই। তাই ওয়ার্ডগুলোতে বাল্ব সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাড়ে সাত হাজার লাইটের টেন্ডার হয়েছিল, যা পর্যায়ক্রমে সরবরাহের পর শেষ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আগামী ৪ আগস্ট টেন্ডার ওপেন হবে এবং ১০ আগস্টের মধ্যে পর্যাপ্ত লাইটের মজুদ নিশ্চিত করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]