গাজার ত্রাণকেন্দ্র যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’! গত ৭২ ঘণ্টায় অনাহারে মৃত্যু ২১ শিশুর

আপলোড সময় : ২৩-০৭-২০২৫ ০২:৪৬:০০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৩-০৭-২০২৫ ০২:৪৬:০০ অপরাহ্ন
পর্যাপ্ত খাবার নেই, ত্রাণশিবিরের বাইরে লম্বা লাইন, একটু বেচাল হলেই ধেয়ে আসছে একের পর এক গুলি! সেই গুলি কারও মাথায়, কারও পায়ে, আবার কারও বুক এ ফোঁড়-ও ফোঁড় করে দিচ্ছে! এমন ছবি গাজায়। তার সঙ্গে জুড়েছে তীব্র খাদ্যসঙ্কট এবং অপুষ্টি! আর এই অনাহার এবং অপুষ্টির শিকার হচ্ছে শিশুরা। গাজার এক হাসপাতালের প্রধান জানিয়েছেন, গত তিন দিনে অপুষ্টি এবং অনাহারে সেখানে ২১ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে! গাজার আল-শিফা মেডিক্যাল সেন্টারের ডিরেক্টর মহম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলিতে প্রতি দিনই অপুষ্টি এবং অনাহারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সংখ্যা যথেষ্ট ‘উদ্বেগজনক’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন সালমিয়া।

শুধু অনাহার নয়, তার সঙ্গে প্যালেস্টাইনিদের বাঁচতে হচ্ছে ইজরায়েলি হামলা থেকেও। যদিও প্রতি দিনই হামলার তীব্রতা ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে ইজরায়েলি সেনা। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এখন গাজায় খাদ্যসঙ্কট চরম সীমায় পৌঁছেছে। ২০ লক্ষের বেশি গাজাবাসী খাদ্য এবং জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে হাহাকার করছেন। বাঁচার উপায় ত্রাণশিবির। কিন্তু সেটাও যেন প্যালেস্টাইনিদের কাছে ‘মৃত্যুফাঁদ’! গাজার এই পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মঙ্গলবার এক ভাষণে তিনি গাজার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যু এবং ধ্বংসের এমন এক স্তরে রয়েছে, যার তুলনা নেই।’’

গাজায় পরিচালিত ইজরায়েল-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণকারী সংগঠন গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নিয়েও প্রশ্নের অন্ত নেই। তাদের ত্রাণশিবিরে খাবার আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে তার পরেও সামান্য খাবারের জন্য প্রাণ হাতে নিয়ে ত্রাণশিবিরে ভিড় করছেন প্যালেস্টাইনিরা। যদিও অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিম গাজার আল-মাওয়াসির ঘরহারাদের জন্য তৈরি শিবিরের এক বাসিন্দা আয়েদ জামালের পোস্ট করা কিছু ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে ভয়াবহতার চিত্র তাঁর বর্ণনা, ‘‘ত্রাণশিবিরের লাইনে আচমকা সেনাদের ট্যাঙ্ক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। দেখলাম আমার পাশে থাকা তিন জনের শরীর ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে গেল।’’ ত্রাণ আনতে গিয়েও তাঁকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। হুড়োহুড়িতে শেষ পর্যন্ত জামালের ভাগ্যে জুটেছে খাবারের দু’টি খালি বাক্স!

জিএইচএফ গাজার চার জায়গায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র করেছে। সেগুলি হল তাল আল-সুলতান, সৌদিপাড়া, ওয়াদি গাজা এবং খান ইউনিস। ঘটনাচক্রে, ইজরায়েলি সেনা আগে থেকেই এই সব এলাকায় প্যালেস্টাইনিদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। সেখানকার বাসিন্দাদের স্থান হয়েছে শরণার্থী শিবিরে। সেই সব শিবির থেকে ত্রাণকেন্দ্রগুলির দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার। সেই পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় সেখানকার সাধারণ মানুষকে!

আশ্চর্যের বিষয় হল, জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলি খোলা থাকে খুবই কম সময়ের জন্য। তাদের ফেসবুক পেজের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রগুলি দিনে এক বার খোলে, তা-ও মাত্র আট মিনিটের জন্য। জুন মাসে গড়ে সৌদিপাড়া ত্রাণকেন্দ্রটি খোলা ছিল মাত্র ১১ মিনিট। আর এই সময়ের মধ্যেই ত্রাণ সংগ্রহ করতে হয়। ফলে স্বভাবতই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ঘটে পদপিষ্টের মতো ঘটনাও। একটা বাক্সের জন্য শয়ে শয়ে লোক ঝাঁপিয়ে পড়েন। কে আগে নিতে পারবেন, তারই যেন প্রতিযোগিতা! আর তাতেই প্রাণ হারান অনেকে। জামাল তাঁর ভিডিয়োবার্তায় জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে চার সন্তান রয়েছে। তাই হাজার মৃত্যুভয় থাকলেও প্রাণ হাতে নিয়ে সন্তানদের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য আসতে হয় ত্রাণশিবিরে!

রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত গাজ়ায় খাবারের সন্ধানে গিয়ে বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে এক হাজার জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, ত্রাণশিবির পরিচালনার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই জিএইচএফ-এর। ত্রাণশিবিরগুলি কখন এবং কত ক্ষণ খোলা থাকবে, তা সাধারণত ফেসবুকে পোস্ট করে জানানো হয়। সম্প্রতি ‘টেলিগ্রাম’-এ বার্তা পাঠিয়ে সময় জানাচ্ছে জিএইচএফ। ‘গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাধারণত আগের দিন রাতের দিকে জানিয়ে দেওয়া হয় ত্রাণকেন্দ্র খোলার সময়। দুপুরে শিবির খোলার কথা থাকলেও রাত থেকেই দলে দলে মানুষ আসতে শুরু করতেন। তবে সকলের মনে বিরাজ করে আতঙ্ক। কারণ, সর্বদাই তাঁদের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়!

মার্চ মাস থেকে গাজা অবরোধ করে রেখেছে ইজরায়েলি সেনা। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ত্রাণ বা বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহকারী ট্রাককে। তার জেরে তীব্র খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি গাজাবাসী। বিশ্বের বহু দেশের আপত্তির কারণে অবরোধ কিছুটা শিথিল করেছে ইজরায়েল। কিছু পণ্যবাহী ট্রাক ঢোকার অনুমতি দিয়েছে তারা। তবে তাতেও মিটছে না খাদ্যসঙ্কট। বিভিন্ন মহলের দাবি, গাজ়ায় যে ত্রাণ পৌঁছোচ্ছে, তা অপর্যাপ্ত!

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]