তানোরে বিলুপ্তির পথে বাঁশ ও বেত শিল্প

আপলোড সময় : ২২-০৬-২০২৫ ০১:৩৬:০০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-০৬-২০২৫ ০১:৩৬:০০ অপরাহ্ন
বাঁশ বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। বাঁশ-বেতের সামগ্রী ছাড়া একটা সময় বাঙলা বর্ষবরণ উদযাপন হতো না। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় বেত বনের ঐতিহ্য ছিল গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির রূপ। এক সময় বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হতো বাঁশ ও বেতের পণ্য। অনেকে পরিবার আবার এই শিল্প পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। গ্রাম বাংলার অনেক দরিদ্র পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিলো এই শিল্প। কিন্তু বর্তমানে জনজীবন থেকে সেইসব হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এখন সেই শিল্পের জায়গায় দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক পণ্য। তাই বলা যেতে পারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে শিল্পের ঠিকানা এখন প্রায় জাদুঘরে।

এক সময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্লিতে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, টুকরি, চালনি, খলই, পলই, ঝুড়ি, খাচি, গুমাইসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। এ সকল পণ্য তৈরিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজে সামিল হতো। হাট বাজারের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফেরি করে ফেরিওয়ালারা এসব বেত ও বাঁশ শিল্প তৈরি পণ্য বিক্রিয় করতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। যার কারণে এই শিল্পের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে পারছে না, অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।এতে বিলুপ্ত হতে বসেছে গ্রামবাংলার বাঁশ ও বেত শিল্প। এ কারণে গ্রামের হাটবাজারে বাঁশ ও বেতের তৈরি শিল্প আগের মতো আর চোখে পড়ে না। এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

সঠিক সময়ে রোপণ, প্রয়োজনীয় পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকল্পনার অভাবে  উপজেলায় উজাড় হয়ে যাচ্ছে বাঁশঝাড়। ফলে এলাকা থেকে বাঁশ-বেত নির্ভর শিল্প এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

সরেজমিনে জানা যায়, একসময় গ্রামের হাটবাজারে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প বিক্রি হতো। যেমন কুলা, ডালা, টুপরি, কুড়ি চালুন, তালাই টেমাই, টোপা, ঝাঁটা হোঁচা, মই, মাছ ধরার জোলঙ্গা, পলো, দারকি, ধীল, চাঁই, বানা ও বিভিন্ন শৌখিন খেলনা সামগ্রী। এছাড়া, এলাকায় কাঁচা ঘর তৈরিতে বাঁশের খুঁটি, বেড়া, ঘরের দরজা প্রভৃতি উপকরণ ব্যবহৃত হতো।

বাঁশের তৈরি শিল্প বিক্রেতা আব্দুর আলিম (৫৫) বলেন, ‘আগে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র নিজেরা বাড়িতে তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেছি, তখন লাভ হতো। কিন্তু এখন তেমন লাভ হয় না। রাত-দিন খেটে যা তৈরি করি হাটবাজারে সে তুলনায় বিক্রি নেই। সরকারিভাবে কোনো সাহায্যে সহযোগিতাও পাচ্ছি না। অনেক দুঃখ কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। অভাবের তাড়নায় এপেশার অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছেন। উপযুক্ত কাজ ও অভিজ্ঞতার অভাবে আমরা অন্য পেশায় যেতে পারিনি।’

সবুজ দেওয়ান (৪৫) বলেন, ‘এ পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন অটো ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমাদের গোত্রের দুই-তিনটি পরিবার ছাড়া সবাই পেশা পরিবর্তন করেছেন। একসময় পল্লী এলাকায় বাঁশ ও বেত ঝাড় থাকায় বাঁশের তৈরি শিল্পের প্রচুর ব্যবহার ছিল। কিন্তু আগের মতো এখন বাঁশঝাড় আর বেত চোখে পড়ে না। দুষ্প্রাপ্যতার কারণে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি কুটির শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি নিঃস্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী পরিবারগুলো।

সম্পাদকীয় :

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

রাজশাহীর সময় অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবেদনকৃত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা ।

অফিস :

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204 Thana : Motihar,Rajshahi

Email : [email protected],                    [email protected]