আত্মীয়তা কি শুধু মানুষের মধ্যেই হয়, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। পশুর মধ্যেই রয়েছে আত্মীয়তার বন্ধন। এই যেমন ধরুণ, রাজা-বাদশার কথাই। জন্মের পর থেকেই চার দেয়ালের মধ্যে বেড়ে ওঠা এই ষাঁড় দুটো কিন্তু সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। মামা ভাগ্নে যেখানে বিপদ নেই সেখানে। রাজা-বাদশার জীবনটাও তেমনই। তাই নওগাঁর এই দুই ষাড় নিয়ে আলোচনারও শেষ নেই।
এই ষাঁড় দুটি প্রস্তুত করেছেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বেওলা গ্রামের মজিবর সরদারের ছেলে ব্যবসায়ী জাহিদুল সরদার। জন্মের পর থেকেই গোয়াল ঘরের চার দেয়ালে লালন পালন হয়ে আসছে মামা-ভাগ্নে সম্পর্কের এই ষাড় দুটো। রাজার ওজন ৩০ মণ আর বাদশার ওজন প্রায় ২৩ মণ। চার দেয়ালের ভেতরে বড় হলেও রাজা-বাদশার প্রতি পালক পরিবারের আদর যত্নের কোন কমতি ছিলো না।
জাহিদুল সরদার জানান, আড়াই বছর আগে দুই গাভী থেকে দুটি সাদা-কালো রংয়ের বাছুর পেয়েছেন তিনি। বাছুরের শারীরিক গঠন দেখে আর বিক্রি করেননি। শখের বসে ধীরে ধীরে লালন পালন করেছেন। জাহিদুল জানান, ষাঁড় দুটি প্রস্তুত করতে কোন রাসায়নিক বা ক্ষতিকর কোনো খাবার খাওয়াননি। নিজের সন্তানের ন্যায় লালন-পালন করেছেন। তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে আপেল আঙুরের মতো ফলও।
এতো সযত্নে লালন-পালনের পরও, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার রাজা-বাদশাকে বিক্রি করে দিতে চাইছেন জাহিদুল। এর পেছনে কারণ, ষাঁড় দুটোর ওজন। এতো ওজনের ষাঁড় আর রাখা যাচ্ছে না গোয়ল ঘরে। এখানেও সমস্যা আছে। শারীরিক গঠন ও ওজনের কারণে গোয়াল ঘরের দরজা দিয়ে তাদের বের করা সম্ভব হবে না, দেয়াল ভাঙতে হবে বলেই বলে মনে করছেন খামারি।
মামা-ভাগ্নে সম্পর্কের রাজা-বাদশাকে লালন-পালনে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে জাহিদুল জানান, ৩০ মন ওজনের রাজার দাম চাওয়া হচ্ছে ১২ লাখ টাকা এবং ২৩ মন ওজনের বাদশার দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। তবে কী দামে বিক্রি হবে, তা এখনো বলতে পারছেন না তিনি। জাহিদুল জানালেন, যদি শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয়ে যায়, তাহলে রাজা-বাদশাকে বিদায় নিতে কষ্ট হবে তাদের।
জাহিদুলের স্ত্রী জানান, নিজ সন্তানের মতোই অনেক যত্ন করে লালন পালন করেছি রাজা বাদশাকে। প্রতি দিন সকালে রাজা-বাদশার কাছে ছুঁটে না গেলে তার দিন শুরু হতো না। খাবারের বিষয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে স্বভাবের রাজা-বাদশা। মুখে রোচে না, এমন খাবার দিলে অভিমান করে না খেয়েই থাকতো। এমন সব ঘটনায় এই ষাঁড়ের সঙ্গে তাদের মায়ার বন্ধন গড়ে ওঠেছে বলেও মনে করেন জাহিদুলের স্ত্রী।
জাহিদুল জানান, তিনি মূলত ধান-চাল, ভুট্টা, সরিষার আড়তদার। বাড়িতে বেশ কয়েকটা ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি রয়েছে তার। আড়াই বছর আগে দুই গাভি থেকে দুটি সাদা-কালো রঙের ষাঁড় বাছুর পেয়েছেন তিনি। যারা আবার সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। এ কারণে বিক্রি না করে শখের বসে ধীরে ধীরে লালন পালন করেছেন। তার ইচ্ছা, গোয়েলে এসে কোন ক্রেতা রাজা-বাদশাকে দেখে ভালো দাম দিয়ে নিয়ে যাক।